মাতৃত্বের শ্রেষ্ঠ দান: মাতৃদুগ্ধে শুরু হোক সুস্থ জীবনের গল্প

  • Home
  • Care
  • মাতৃত্বের শ্রেষ্ঠ দান: মাতৃদুগ্ধে শুরু হোক সুস্থ জীবনের গল্প

মাতৃদুগ্ধপান শুধুমাত্র একটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি নয়; এটি একটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত উপায় যা নবজাতকের সঠিক পুষ্টি, রোগপ্রতিরোধ এবং মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একজন মা ও তার সন্তান—উভয়ের জন্যই এটি স্বাস্থ্যকর, নিরাপদ এবং কার্যকর একটি অভ্যাস।

১. জন্মের পর প্রথম ছয় মাস: একচেটিয়া মাতৃদুগ্ধই যথেষ্ট
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং ইউনিসেফ প্রথম ৬ মাস পর্যন্ত শিশুকে একচেটিয়াভাবে মাতৃদুগ্ধ দেওয়ার পরামর্শ প্রদান করে। এই সময়ে শিশুর হজম প্রক্রিয়া এখনও অন্যমুখী খাদ্যের জন্য উপযুক্ত নয়। মায়ের দুধেই রয়েছে শিশুর প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল ও পানি—আলাদাভাবে কিছু দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

  1. পুষ্টি ও সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে মাতৃদুগ্ধের ভূমিকা
    মায়ের দুধ শিশুর জন্য সম্পূর্ণ পুষ্টিকর একটি আধার। এতে থাকে উচ্চ মানের প্রোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টিবডি এবং রোগ প্রতিরোধীর উপাদান, যা শিশুকে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, কান এবং শ্বাসনালির সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। দীর্ঘমেয়াদে এটি অ্যাজমা, টাইপ ১ ডায়াবেটিস এবং স্থূলতার ঝুঁকি হ্রাসে সহায়তা করতে পারে।

৩. মস্তিষ্ক ও মানসিক বিকাশে সহায়ক
মাতৃদুগ্ধে থাকা DHA (Docosahexaenoic Acid) এবং অন্যান্য এসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া মা ও শিশুর মধ্যকার চর্ম সংস্পর্শ, চোখে চোখ রাখা এবং আবেগীয় সাড়া নিয়মিতভাবে মানসিক স্বাস্থ্য ও সমাজিক বিকাশ গঠনে সাহায্য করে।

৪. মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক পীড়ক
দুধ খাওয়ানোর সময় মায়ের দেহে অক্সিটোসিন হরমোনের নিঃসরণ ঘটে, যা গর্ভাশয় সংকোচনে সাহায্য করে এবং প্রসবপরবর্তী রক্তপাত কমায়। মাতৃদুগ্ধপানের কারণে অতিরিক্ত ক্যালোরি নিঃসরণ হয়, যা ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি প্রসবোত্তর বিষণ্ণতা প্রতিরোধেও কিছুটা কার্যকর।

৫. সহজলভ্য, স্বাস্থ্যসম্মত ও খরচ সাশ্রয়ী
মাতৃদুগ্ধ যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গায়, কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই প্রদান করা যায়। এটি নিরাপদ, জীবাণুমুক্ত এবং তাপমাত্রা অনুকূল। ফর্মুলা, বোতল বা গরম করার প্রয়োজন নেই। স্বাস্থ্য খরচ কমানোর পাশাপাশি এটি পরিবেশবান্ধব, কারণ এতে অতিরিক্ত প্লাস্টিক ব্যবহার বা উৎপাদন বর্জ্য কম সৃষ্টি হয়।

৬. মা ও সন্তানের আবেগীয় বন্ধন গড়ায় দুধ খাওয়ানোর প্রক্রিয়ায়
স্তন্যদান মা ও সন্তানের মধ্যে একটি গভীর আবেগীয় সম্পর্ক গড়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টি করে। এটি শুধুমাত্র খাদ্য প্রদানের নয়, বরং নিরাপত্তা, সাড়া ও ভালোবাসা বিনিময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম।

৭. চ্যালেঞ্জ থাকলেও সহায়তা পাওয়া সম্ভব
মাতৃদুগ্ধপান শুরুতে সবসময় সহজ না-ও হতে পারে। অনেক মা স্তনবৃন্তের ব্যথা, ল্যাচিং সমস্যা বা দুধের কম পরিমাণ নিয়ে উদ্বিগ্ন হন। এমন পরিস্থিতিতে ল্যাক্টেশন কনসালট্যান্ট, স্বাস্থ্যকর্মী ও মায়ের সহায়তামূলক গ্রুপ তাদের যথাযথ পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে বর্তমান সমস্যার সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

৮. বিকল্প প্রয়োজন হলে – সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি জরুরি
বিভিন্ন শারীরিক, মানসিক বা পারিবারিক কারণে মাতৃদুগ্ধপান সম্ভব না হলে, মায়ের প্রতি সহানুভূতিশীল ও সহায়ক মনোভাব রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক ফর্মুলা অনেক ক্ষেত্রে সন্তোষজনক বিকল্প হতে পারে। শিশুর সুস্থতা, সুরক্ষা ও মায়ের মানসিক স্বাচ্ছন্দ্য—এই সবই একটি পরিচর্যার সমন্বিত মূল্যায়নের অংশ হওয়া উচিত।

উপসংহার: এক সমন্বিত স্বাস্থ্য বার্তা
মাতৃদুগ্ধপান একটি স্বাস্থ্যমুখী, নিরাপদ এবং আর্থিকভাবে কার্যকর একটি পন্থা, যা মা ও শিশুর দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতায় অবদান রাখে। এটি শুধুমাত্র স্বাস্থ্যগত দিক নয়, মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়ার দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পরামর্শ:
যদি আপনি মাতৃদুগ্ধপান নিয়ে কোনো ধরণের দ্বিধা বা চ্যালেঞ্জ অনুভব করেন, অনুগ্রহ করে একজন প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী বা ল্যাক্টেশন পরামর্শদাতার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আপনার সুস্থতা এবং সিদ্ধান্তকে আমরা শ্রদ্ধা করি এবং সাহায্যের জন্য আমরা সবসময় পাশে আছি।

আমাদের ঠিকানা: কাটজুড়িডাঙ্গা, বাঁকুড়া
যোগাযোগ নম্বর: +91 8170021311
ওয়েবসাইট: https://jeebansurakshahospital.in

Leave A Comment

Cart
  • Your cart is empty Browse Shop